বিশ্ববিখ্যাত মুসলিম ধর্মতাত্ত্বিক, আইনজ্ঞ, দার্শনিক এবং আধ্যাত্মিক
ব্যক্তিত্ব ইমাম গাজ্জালি ১১১১ সালের ১৯ ডিসেম্বর পারস্যের তুসে ইন্তেকাল
করেন। অনেক ঐতিহাসিকের মতে, সবচেয়ে প্রভাবশালী মুসলিম হিসেবে নবী করীম
(সা.)-এর পরই তার স্থান। ইসলামী দর্শনে তার প্রভাব যুগান্তকারী। ‘ইসলামের
সাক্ষ্য’ হিসেবে খ্যাত তিনি। ‘ইসলামের আক্ষরিক রক্ষাকর্তা’ হিসেবেও স্বীকৃত
তিনি। সুফিবাদী এবং কট্টর শরিয়তপন্থীদের মধ্যে একটা সমন্বয় সাধনের প্রয়াস
ছিল তার, পরবর্তীকালে যার ইতিবাচক প্রভাব পড়েছিল। ১০৫৮ খ্রিস্টাব্দে তার
জন্ম।
যুবক বয়সে গাজ্জালি বাবাকে হারান। এসময় বাবার বন্ধুর কাছে ভাইসহ বেড়ে ওঠেন
তিনি। পরবর্তীকালে মাদরাসায় ভর্তি হওয়ার জন্য গাজ্জালি গুরগানে যান। সেখানে
তিনি ৭ বছর ফিকাহ শাস্ত্র (ইসলামী আইন শাস্ত্র) অধ্যয়ন করেন। পরবর্তীকালে
বিখ্যাত মুসলিম পণ্ডিত আবুল মালি জুয়ানির ছাত্রত্ব গ্রহণ করেন। জুয়ানির
মৃত্যুর পর প্রভাবশালী সেলজুক উজির নিজামুল মুলক তুসির দরবারে আমন্ত্রিত
হন। তার পণ্ডিত্যে মুগ্ধ হয়ে উজির তাকে বাগদাদের নিজামিয়ার অধ্যাপক নিযুক্ত
করেন।
১০৯৫ সালে এক আধ্যাত্মিক সঙ্কটের মুখে তিনি বাগদাদ ছেড়ে মক্কায় যান হজের
উদ্দেশে। পরিবারের জন্য ব্যবস্থা রেখে বাকি সম্পদ বিলি করে দিয়ে তিনি সুফির
জীবন বরণ করেন। এসময় দামেস্ক এবং জেরুজালেমে কিছুকাল কাটানোর পর তিনি তুসে
স্থায়ী হন। সেখানে বেশ ক’বছর কাটান নির্জনে।
গাজ্জালীর পিতার নাম ছিল মোহাম্মদ আল গাজ্জালি। গাজ্জাল শব্দের অর্থ সুতা
কাটা। কারও মতে গাজ্জালি বংশের লোকেরা সম্ভবত সুতার ব্যবসা করতেন। তাই
তাদের বংশীয় উপাধি গাজ্জালী। পাশ্চাত্য ও গ্রিক দর্শনের বিস্তার লাভকালে
গাজ্জালির জন্ম খুবই তাত্পর্যপূর্ণ। ধারণা করা হয়ে থাকে তার আগমনের মধ্য
দিয়েই ইসলামী বিশ্বে সেগুলোর কবর রচিত হয়। তার চিন্তাধারাকে মুসলিম
ধর্মতত্ত্বের বিবর্তন বলে ধরা হয়। তিনি বলতেন, দার্শনিক মতবাদ কখনও ধর্মীয়
চিন্তার ভিত্তি হতে পারে না। সমকালীন দার্শনিকদের দর্শন-চিন্তায় অপূর্ণতা
তাকে সমালোচনামুখর করেছিল।
ইতিহাস থেকে জানা যায়, মৃত্যুর দিন ভোর বেলায় তিনি ফজরের নামাজ আদায় করেন।
এরপর নিজ হাতে কাফনের কাপড় পরে শুয়ে পড়েন। এভাবেই নশ্বর পৃথিবী থেকে বিদায়
নেন এই মহান দার্শনিক ৫০৫ হিজরি সনে। অমর কবি ফেরদৌসীর পাশে তিনি সমাহিত।
সংগৃহিত: দৈনিক আমার দেশ
এই মহান ব্যক্তির কিছু বই পেশ করা হল।
ধন্যবাদ। অনেক উপকার হল।
ReplyDelete