পৃথিবী আমার বন্ধু- বই রিভিউ

Bohi.com
3 minute read
0

পৃথিবী আমার বন্ধু গ্রন্থটি মূলত পরিবেশবিজ্ঞানবিষয়ক বই। পৃথিবী প্রসঙ্গে ইসলামি দর্শন এতে তুলে ধরা হয়েছে। মুসলিমদের মন-মানসে ও অনুভব-উপলব্ধিতে প্রকৃতির স্বরূপ আলোচনা করা হয়েছে। পৃথিবী, গ্রহ, নক্ষত্র, মহাবিশ্ব আল্লাহর সৃষ্টিজগৎ। আমাদের চারপাশে প্রকৃতির যা কিছু আছে সবই আল্লাহর সৃষ্টি। তিনি নির্ধারিত পরিমাপে সৃষ্টি করেছেন সবকিছু। এবং তাঁর সৃষ্টিজগৎ মানুষের কল্যাণেই নিয়োজিত।

আল্লাহ মানুষকে পৃথিবীর খলিফা হিসেবে পাঠিয়েছেন। এই পৃথিবীতেই আমাদের বসবাসের ঠিকানা করেছেন। মানুষ পৃথিবীকে আবাদ করবে। প্রাকৃতিক নেয়ামতরাজি কাজে লাগাবে, উপভোগ করবে। পাশাপাশি এসব উপাদানের সুরক্ষা দেবে, আল্লাহর নিদর্শনাবলি অনুধাবন করবে, শিক্ষাগ্রহণ করবে এবং আল্লাহর হুকুম অনুযায়ী চলবে।

পিপাসা নিবারণ, রান্নাবান্না, ধোয়া-পাখলা, সেচ, কলকারখানাসহ বিভিন্ন কাজে পানির প্রয়োজন। পানি প্রকৃতির অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। পানির ওপর পৃথিবীর সকল জীবজগৎ নির্ভরশীল। তাই পানির অপর নাম জীবন। আল্লাহ তাআলার ইবাদতের জন্য পবিত্র হতে হয়। সেক্ষেত্রেও পানি প্রয়োজন। আল্লাহ তাআলা ছাড়া কেউ পানিকে সহজলভ্য ও সুমিষ্ট করতে পারে না। তাই মানুষ পানি ব্যবহার করবে কিন্তু দূষিত করবে না, অপচয় করবে না। এমনকি ইবাদতের জন্য পবিত্রতা অর্জনের ক্ষেত্রেও মানুষ পানি অপচয় করবে না। এটা ইসলামের নির্দেশ। ইসলামি ফিকহে পানির সংজ্ঞা, প্রকারভেদ ও অবস্থাবলি নিয়ে বিস্তর আলোচনা করা হয়েছে।

আল্লাহ তাআলা গোটা জমিনকে সৃষ্টিকুলের জীবনধারণের জন্য উপযোগী পরিবেশ হিসেবে সৃষ্টি করেছেন। পৃথিবী, জীবন, প্রাণ ও চারপাশ ঘিরে যা কিছু রয়েছে তার সম্পর্কে মৌলিক দৃষ্টিভঙ্গি মুসলিমরা পেয়ে থাকে কোরআন ও হাদিস থেকে। এই দৃষ্টিভঙ্গি ও প্রত্যয় কেবল বৌদ্ধিক দর্শন নয় অথবা কেবল যৌক্তিক জ্ঞান নয়; বরং তা দ্বীনের সঙ্গে সম্পৃক্ত। আল্লাহ তাআলা পৃথিবীর বিশেষত্ব সম্পর্কে আমাদের দৃষ্টিভঙ্গিকে বিভিন্ন আঙ্গিক থেকে স্পষ্ট করেছেন। আল-আরদ (পৃথিবী) শব্দটি কোরআনে ৪৩০ বার উল্লেখ করেছেন। তিনি গোটা জমিনকে মানুষের জন্য নামাজের স্থান ঘোষণা করেছেন। পানির অবর্তমানে মাটিকে পবিত্রতার মাধ্যম বানিয়েছেন। তাই একজন মুসলিমের জন্য যত্রতত্র মাটিকে দূষণ করা কোনভাবেই সমীচীন না।

সেই প্রাচীন যুগে মানুষ বায়ুদূষণ নামে কোন শব্দের সাথে পরিচিত ছিল না। কেউ চিন্তাও করেনি যে বায়ু দূষিত হতে পারে। কিন্তু ইসলাম মানবজাতিকে তখনই সতর্ক করে দিয়েছে। মৃতদেহ দ্রুত দাফন, গাছপালা রোপণ ও সবুজায়নের প্রতি আহ্বান, রাতের বেলা বাড়িঘরে আগুন জ্বালাতে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। ফিকহের কিতাবাদিতে বায়ুতে মানুষের অধিকার, চুল্লির চিমনী, প্রতিবেশীর ধোঁয়া ইত্যাদি বিষয়ে বিস্তর আলোচনা করেছে। সেখান থেকে আমরা আধুনিক কলকারখানার বিধান বিবেচনা করতে পারি।

আধুনিক বাস্তবতায় মানুষের অন্যায় হস্তক্ষেপের কারণে বহু রোগবালাই চতুর্দিকে ছড়িয়ে পড়েছে। রোগ-ব্যাধি থেকে সুরক্ষার জন্য শরীর, পোশাক ও স্থানের পরিচ্ছন্নতার প্রতি নির্দেশ দিয়েছে ইসলাম। দূষণকারী বিষয় পরিহার করা, সংক্রামক ব্যাধি থেকে কোয়ারেন্টাইন অবলম্বন করা ইসলামেরই নির্দেশ।

কার্বন নিঃসরণের সংকটজনক বৃদ্ধি, অক্সিজেনের মাত্রা উদ্বেগজনক হ্রাস, রাসায়নিক সার, কীটনাশক, অব্যবহৃত প্লাস্টিক, পলিথিন, শহর ও শিল্পকারখানার দূষিত বর্জ্য, পারমাণবিক বিস্ফোরণ, পারমাণবিক কেন্দ্র থেকে নির্গত তেজস্ক্রিয় বর্জ্য ইত্যাদি ক্ষতিকর পদার্থ পরিবেশ দূষণ করছে প্রতিনিয়ত। মানুষের লাগামহীন উন্নয়ন, জাগরণ ও শিল্প-উন্মত্ততার ফলে পরিবেশের এমন কোনো উপাদান নেই যা কোনো-না-কোনোভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি। যুদ্ধ ও দখলদারত্বের ফলেও পরিবেশের ক্ষতি হচ্ছে অপরিমেয়।

প্রকৃতিকে বাঁচানোর জন্য বৈশ্বিক কিছু প্রচেষ্টা পরিলক্ষিত হচ্ছে। যেমন, ইউনেপ, আইপিসিসি, স্টকহোম সম্মেলন, ধরিত্রী সম্মেলন, কিয়োটো প্রটোকল ইত্যাদি। এবং প্রাকৃতিক উৎসগুলোকে কাজে লাগানোর বৈশ্বিক প্রচেষ্টাও পরিলক্ষিত হচ্ছে। নবায়নযোগ্য শক্তি ব্যবহারে তাগিদ, কাচ প্রযুক্তি, তাপের বিকল্প উৎস সৃষ্টি ইত্যাদি। তবে পরিবেশ সুরক্ষার জন্য যুৎবদ্ধ আন্তরিক, সামগ্রিক ও প্রায়োগিক উদ্যোগের প্রকট অভাব।

উদ্ভিদ, জীবজগৎ, মাটি, পানি, বায়ু ও প্রকৃতির সুরক্ষায় ইসলামের জীবনবিধানের বিকল্প নেই। সন্দেহ নেই যে, ইসলামের বিধান অনুসরণ করলে লাগামহীন উন্নয়ন বারিত হবে, শিল্প-উন্মত্ততা স্তিমিত হয়ে যাবে কিন্তু বেঁচে যাবে মুমূর্ষু প্রকৃতি ও আমাদের সুন্দর পৃথিবী।

পৃথিবী আমার বন্ধু
লেখক : ড. রাগিব সারজানি
অনুবাদক : আবদুস সাত্তার আইনী 
প্রকাশনী : মাকতাবাতুল হাসান

Post a Comment

0Comments
Post a Comment (0)